Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

প্রাণিজ আমিষ টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত জীবন গঠন

প্রাণিজ আমিষ টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত জীবন গঠন

ডা: শেখ আজিজুর রহমান১, ফয়সাল মেহেদী হাসান২

খাদ্য নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(১) অনুুচ্ছেদে জনগণের পুষ্টিস্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিকে রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। নাগরিকের কর্মক্ষম ও সুস্থ জীবন যাপনের প্রয়োজনে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে বাংলাদেশ সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ এ ঘোষিত ‘ক্ষুধা মুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান’ অর্জনে টেকসই প্রাণিসম্পদ উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ার কার্যকর উদ্যোগ ও অঙ্গীকার প্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর ১৬ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব খাদ্য দিবস। বিশ্ব খাদ্য দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য-Our Actions are our future. Better production, better nutrition, a better environment and a better life. অর্থাৎ ‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ। ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি আর ভালো পরিবেশেই উন্নত জীবন।’  


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রণীত রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন করতে সামগ্রিক কৃষি উন্নয়ন তথা প্রাণিসম্পদের টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও সবার জন্য সুষম পুষ্টির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। প্রাণিসম্পদ সেক্টর দেশের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ গবাদিপশু-পাখির জাত সংরক্ষণ, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান  রাখছে। চামড়াসহ বিভিন্ন উপজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও এ খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকার নিরাপদ প্রাণিজ পুষ্টি উৎপাদনের  লক্ষ্যে দেশব্যাপী  বিভিন্ন  কর্মপরিকল্পনার  বাস্তবায়ন  করে  যাচ্ছে।


প্রাণিসম্পদ খাত নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ উৎপাদন ও পুষ্টি নিরাপত্তার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। মানবসভ্যতা বিকাশের প্রতিটি স্তরে প্রাণিসম্পদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কৃষি কাজ শুরুর আগে পশু শিকারই মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন হলেও, সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে পশুকে ভূমি কর্ষণ, পরিবহন ও খাদ্য উৎপাদনসহ বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়েছে। ৭০ এর দশকে পারিবারিক আমিষের চাহিদা পূরণ, জমি কর্ষণ ও পরিবহন শক্তিই ছিল পশুপাখির পালনের প্রধান উদ্দেশ্য। স্বাধীনতা পরবর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও উদ্যোগে ১৯৭৩ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে ১২৭টি হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান ষাঁড় আনয়নের মাধ্যমে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিও বহুমাত্রিক কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে দেশীয় গবাদিপশুর উন্নয়ন ঘটেছে। ৮০ এর দশক থেকে এই খাতে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে সূচিত হয়েছে উৎপাদনশীল গবাদিপশু-পাখির বাণিজ্যিক পালন পদ্ধতি। ফলে, সামগ্রিক প্রাণিসম্পদ খাত শিল্প খাতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গার্মেন্টের পর পোল্ট্রি শিল্প এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থান খাত, যেখানে প্রায় ৬০ লক্ষের অধিক মানুষ সরাসরি কর্মরত। বর্তমানে, জনসংখ্যার প্রায় ২০% প্রত্যক্ষ  এবং ৫০% পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের উপর নির্ভরশীল। যার ফলশ্রুতিতে প্রতি বছর গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগিজাত উৎপাদন বেড়ে চলছে। বাংলাদেশ ছাগলের মাংস উৎপাদনে চতুর্থ এবং গবাদিপশু উৎপাদনে বিশ্বে ১২তম। ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও) ও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার ২০১৫ সালের তথ্য মতে বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বিশ্বে অন্যতম সেরা মাংস ও চামড়া উৎপাদনকারী জাত। বিগত চার বছর ধরে দেশীয় গবাদিপশু দ্বারা দেশের কোরবানির চাহিদা পূরণ হয়েছে। সামগ্রিক কৃষি উন্নয়নে বৃহৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেছেন সবার আগে দরকার আমাদের টোটাল জরিপ। জরিপ ছাড়া কোনো পরিকল্পনাই সফল হবে না। স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে দেশে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১০ লাখ মেট্রিক টন, ৫ লাখ মেট্রিক টন এবং ১৫০ কোটি, যা বর্তমানে ২০২০-২১ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ১১৯.৮৫ লাখ মেট্রিক টন, ৮৪.৪০ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০৫৭.৬৪ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।


উক্ত পরিসংখ্যানই বলে দেয়, পুষ্টিসমৃদ্ধ এসব খাদ্য উপাদানসমূহ মানুষের আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে। এফএও এর সুপারিশ অনুযায়ী একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক ন্যূনতম ২৫০ মিলি দুধ ও ১২০ গ্রাম মাংস  এবং বছরে ১০৪টি করে ডিম খাওয়া প্রয়োজন। যেখানে বর্তমানে দুধ, মাংস ও ডিমের প্রাপ্যতা যথাক্রমে ১৯৩.৩৮ মিলি/জন/দিন, ১৩৬.১৮ গ্রাম/জন/দিন এবং ১২১.১৮টি/জন/বছর। বিগত ১২ বছরে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন যথাক্রমে ৫ গুণ, ৭ গুণ এবং ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।


জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে দেশে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের রূপকল্প হচ্ছে প্রাণিসম্পদের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে সবার জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত  ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ করা। তাই দুধ, মাংস ও ডিমের প্রাপ্যতা বৃদ্ধির জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ডেইরি শিল্পের বিকাশে ২০১৬ সাল থেকে দেশব্যাপী ৫% হারে স্বল্প সুদে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের মাধ্যমে গাভী পালন করার জন্য ঋণ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে বিদেশে মাংস রপ্তানির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার এফএমডি ও ক্ষুরারোগ মুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, মাংস ও মাংসজাত পণ্যের গুণগতমান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বমানের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি স্থাপন, গবাদিপশুর জাত উন্নয়নসহ নানা ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য মোট ১৭ প্রকারের টিকা উৎপাদন, বিতরণ ও প্রয়োগ করে আসছে। ই-প্রাণিসম্পদ সেবা, আইসিটি উন্নয়ন, উদ্ভাবনী কার্যক্রম, প্রাণিসম্পদ সহায়ক মোবাইল এ্যাপ এবং সফটওয়ারভিত্তিক রিপোর্টিং চালুর মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় অগ্রসরমান। সরকার কোভিড-১৯ ক্ষতিগ্রস্ত ডেইরি এবং পোল্ট্রি খামারিদের প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৭৪ জন খামারিকে ৮৪৬ কোটি প্রণোদনা প্রদান করেছে। তাছাড়া সরকার প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন অব্যাহত রাখার নিমিত্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ৪% সুদে ৪৩ হাজার ৫০১ জন খামারিকে প্রায় ৮৫৭ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। মহামারি করোনা ভাইরাসের ক্রান্তিকালীন সময়েও ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সকলের জন্য নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিত করা হয়েছে।


জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিগত ১২ বছরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রায় ৯১.২ লাখ বেকার যুবক, যুব-মহিলা, দুস্থ মহিলা, ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষককে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্র খামারি ও কৃষকদের গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি লালন পালনের উপর প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা ও পরামর্শ সেবা প্রদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে প্রাণী চিকিৎসক কর্তৃক সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ জাতীয় পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করবে।


ক্ষুধা দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তাসহ উন্নত সহজলভ্য পুষ্টির জোগান এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্য-২ বাস্তবায়ন প্রাণিসম্পদ খাতের উপর অর্পিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে কাক্সিক্ষত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও প্রাণিজ আমিষের পর্যাপ্ত জোগান আমাদের আশাবাদী করছে। আগামীতে নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রাণিসম্পদ সেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

লেখক : ১মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ঢাকা, বাংলাদেশ। ২উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, পরিকল্পনা শাখা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৩৪০৩২১৩, ই-মেইল : kfaysal_1971@yahoo.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon